শনিবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়েকে ১৪৫ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল টাইগাররা। মুশফিক ম্যাচ সেরা হন।
প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৭৩ রান করেছিল বাংলাদেশ। জবাবে ৩৬.১ ওভারে ১২৮ রানে ৯ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। এখানেই শেষ হয় ম্যাচ। কারণ ফিল্ডিংয়ের সময় বলের আঘাতে অ্যাঙ্কেলে ব্যথা পান জিম্বাবুয়ের উইকেটকিপার মুতুম্বাবি। পরে তাকে হাসপাতালেও নেয়া হয়। ইনজুরিতে পড়ে যাওয়া মুতুম্বাবি আর ব্যাটিংয়ে নামেন নি। এমনকি আর দিন ছয়েক লাগবে তার সুস্থ হতে।
২৭৪ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে জিম্বাবুয়ের শুরুটা খারাপ ছিল না। চিবাবা-জংউইয়ের ওপেনিং জুটি ৪০ রান তুলেছিল। ইনিংসের দশম ওভারে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন সাকিব। চিবাবা (৯) লিটনের হাতে ক্যাচ দেন। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। ওপেনার জংউই ও অধিনায়ক চিগুম্বুরা ছাড়া কেউ বলার মতো প্রতিরোধ গড়তে পারেননি।
ক্রেইগ আরভিনও (২) ফিরেছেন সাকিবের বলে নাসিরের কাছে সহজ ক্যাচ দিয়ে। ইতিবাচক ব্যাটিং করা জংউইকে ফেরান আল-আমিন। তিনি ৩৯ রান করেন। সাকিবের তৃতীয় শিকার হন শন উইলিয়ামস (৮)। পঞ্চম বোলার হিসেবে বোলিং করতে এসে মাশরাফিও উইকেটের দেখা পেয়েছেন। নিজের পরপর দুই ওভারে টাইগার অধিনায়ক তুলে নেন সিকান্দার রাজা (৩) ও ওয়ালারের (১) উইকেট। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ওয়ানডেতে দুশো উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
৮৩ রানে ৬ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ের ইনিংসটা দীর্ঘায়িত হয়েছিল চিগুম্বুরা- ক্রেমারের ৩৭ রানের জুটিতে। ক্রেমারকে (১৫) এলবির ফাঁদে ফেলেন সাকিব। নিজের শেষ ওভারে পানিয়াঙ্গারাকে বোল্ড করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেটের দেখা পান বাঁহাতি এই স্পিনার। চিগুম্বুরাকে ফিরিয়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়ের লেজটা মুড়ে দেন নাসির। চিগুম্বুরা ৪১ রান করেন। সাকিব ৪৭ রানে নেন ৫ উইকেট। মাশরাফি ১৩ রানে পান ২ উইকেট।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ ইনিংসটা আবর্তিত হয়েছে মুশফিকের ব্যাটকে ঘিরে। দলীয় ৩০ রানের মাঝে লিটন (০), মাহমুদউল্লাহ (৯) বিদায়ের পর উইকেটে এসেছিলেন মুশফিক। তৃতীয় উইকেটে তামিমের সঙ্গে ৭০ রানের জুটি গড়েন তিনি। শুরু থেকে খোলাসবৃত হয়ে থাকা তামিম ও উইকেটে এসে সাবলীল ব্যাটিং করা সাকিব ফিরেছেন অফ স্পিনার সিকান্দার রাজার উপর চড়াও হতে গিয়ে।
২৩ রানের ব্যবধানে দুজনই সিকান্দারের শিকার হন। লং অনে জংউইয়ের হাতে ক্যাচ দেন ৪০ রান করা তামিম। বন্ধুর দেখানো পথে হাঁটতে গিয়ে ডাউন দ্যা উইকেট এসে স্ট্যাম্পড হয়েছেন সাকিব (১৬)। ১২৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসা বাংলাদেশের ভরসার প্রতীক হয়ে একপ্রান্ত আগলে ছিলেন মুশফিক। পঞ্চম উইকেটে সাব্বিরের সঙ্গে শুধু ইনিংস বিনির্মাণ নয় দলের স্কোরটাকে স্বাস্থ্যবান করে তোলার মূল কারিগর ছিল তার ব্যাটই।
মুশফিকের হাফ সেঞ্চুরি আসে ৫২ বলে। মুশফিক-সাব্বির ক্রমে আক্রমণাত্মক হয়েছেন। দলের রানের চাকাও গতি পেয়েছে। ৫৩ বলে সাব্বির পূর্ণ করেন দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি। মুজারাবানির বলে সিঙ্গেল রান নিয়ে মুশফিক পেয়ে যান ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি। ১০৪ বলে তিন অংকের এই ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছান তিনি।
সাব্বির রানআউট হলে ভাঙে ১১৯ রানের জুটি। সাব্বির ৫৮ বলে ৫৭ রান (৪ চার, ২ ছয়) করেন। ৪৮তম ওভারে পরপর দুই বলে ফিরেন নাসির ও মুশফিক। নাসির ক্যাচ দিলেও মুশফিক রান আউট হন। ১০৯ বলে ১০৭ রানের (৯ চার, ১ ছয়) অসাধারণ ইনিংস খেলেন মুশফিক। এই ইনিংস দিয়ে ওয়ানডেতে চলতি বছরে দেশের সেরা রান (৭১৮) সংগ্রাহক হয়ে যান তিনি। টপকে যান ইনজুরির কারণে এই সিরিজ থেকে ছিটকে পড়া সৌম্যর ৬৭২ রানকে।
আকস্মিক কয়েকটি উইকেট হারালেও পথ হারায়নি বাংলাদেশ। বরং শেষ দিকে মাশরাফি-আরাফাত সানির ‘মিনি’ ঝড় বাংলাদেশকে পাইয়ে দেয় আড়াইশো ছাড়ানো স্কোর। শেষ ওভারে ১৯ রান আসে। মাশরাফি একটি চার, একটি ছক্কা মারেন। আরাফাত সানি মারেন দুটি চার। মাশরাফি ১৪, আরাফাত সানি ১৫ রান করেন। জিম্বাবুয়ের মুজারাবানি ও সিকান্দার রাজা ২টি করে উইকেট নেন।
২০১৫ সালে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মুশফিক
চলতি বছরে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সুসময়ের বড় অবদান রয়েছে ব্যাটসম্যানদের। আর বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনে এখন বড় আস্থার নাম মুশফিকুর রহিম। বছর জুড়েই যা অব্যাহত ছিল। শনিবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে ২০১৫ সালে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে গেছেন মুশফিক।
শনিবার প্রথম ওয়ানডে পর্যন্ত ১৬ ম্যাচে তার সংগ্রহ ৭১৮ রান। তিনি ব্যাট করেছেন ১৪ ইনিংস। এদিন ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি দিয়ে মুশফিক ছাড়িয়ে গেছেন সৌম্য সরকারকে। ইনজুরির কারণে চলমান সিরিজটা খেলছেন না সৌম্য। এই সিরিজের আগ পর্যন্ত ২০১৫ সালে দেশের সেরা স্কোরার ছিলেন সৌম্য। ১৫ ম্যাচে বাঁহাতি এই ওপেনারের ঝুলিতে ছিল ৬৭২ রান। চারটি করে হাফ সেঞ্চুরি থাকলেও মুশফিকের সেঞ্চুরি দুটি, সৌম্যর একটি। রান গড় অবশ্য মুশফিকেরই বেশি। সৌম্যর গড় ৫১.৬৯, মুশফিকের ৫৫.২৩। এ তালিকায় তৃতীয় নামটি তামিম ইকবালের। ১৬ ম্যাচ খেলে তামিম করেছেন ৬৫০ রান।
এই সিরিজে পর চলতি বছরে বাংলাদেশের আর কোনো সিরিজ নেই। সিরিজে বাকি আছে দুই ম্যাচ। দলের বাইরে থাকায় সৌম্যর সুযোগ নেই মুশফিককে ছাড়িয়ে যাওয়ার। তবে তামিমের সম্ভাবনা আছে মুশফিকের সঙ্গে পাল্লা দেয়ার। দেশের পক্ষে ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের দৌড়ে শেষ পর্যন্ত কে শীর্ষে থাকবেন তা সময়ই বল দেবে। তবে দলের সঙ্গে বছরটা ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের হিসেবে মুশফিক-তামিমরা খুব উপভোগ করছেন, তা বলাই যায়।