তাহসিন আহমেদ
বাংলাদেশে পেশা হিসেবে দিন দিন ই-কমার্স ও এফ-কমার্স ব্যবসায়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে কর্মসংস্থানের বিকল্প উৎস হিসেবে ই-কমার্স ব্যবসা বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে।
মূলত ই-কমার্স হল ওয়েবনির্ভর একটি প্লাটফর্ম যেখানে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ক্রেতা তার পছন্দমতো পণ্য বা সেবা ক্রয় করে থাকে। অন্যদিকে বিক্রেতারা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ও সেবা সরবরাহ করার মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জন করে।
এফ-কমার্স হল এমন একটি ব্যবসা যেখানে একজন বিক্রেতা ফেসবুকের একটি ব্যবসায়িক পেজের অধীনে তাদের পণ্য ও সেবা সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করে থাকে।
ই-কমার্স ও এফ-কমার্স দুটি ব্যবসা হলেও ২টির ব্যবসায়িক ধরন একই রকম। একটি ওয়েবসাইডভিত্তিক আরেকটি ফেসবুকভিত্তিক। একটি ই-কমার্স ব্যবসা একই সঙ্গে এফ-কমার্স ব্যবসাও হতে পারে। কিন্তু এফ-কমার্স ব্যবসায়ে ওয়েবসাইট থাকে না বলে এটি চালনা অনেক সহজ এবং কম জনবল থাকলেও কম বিনিয়োগ করে ব্যবসা করা যায়।
ই-কমার্স ব্যবসায়ে ওয়েবসাইট, ওয়েব ডিজাইনার ও ডেভেলপার সর্বোপরি একজন আইটি বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি যদি একটি নিজস্ব অফিস থাকে তা হলে গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন সম্ভব হয়।
অন্যদিকে, এফ-কমার্স বাবসায়ে মূলত ফেসবুকভিত্তিক হওয়ার কারণে শুধু পেজ পরিচালনার জন্য প্রশাসক নিয়োগ দিলেই চলে। এতে অফিস খরচের টাকা বেঁচে যায় যা দিয়ে পেজের ও পণ্যের বিজ্ঞাপন দিয়ে ফেসবুক গ্রাহকদের থেকে অর্ডার পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
ই-কমার্স বাবসা করতে চাইলে করণীয়
অল্প পুঁজিতে ই-কমার্স বাবসায় শুরু করতে হলে প্রথমেই তাকে ই-কমার্স ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে যথাযথ ধারণা রাখতে হবে। যেমন-
১. ওয়েবসাইটের ডোমেইন নাম নিবন্ধন করতে হবে।
২. ওয়েবসাইটের জন্য হোসটিং কিনতে হবে।
৩. এরপর ওয়েবডিজাইন ও ডেভেলপ করার জন্য ভালো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
৪. সম্ভাব্য পণ্য ও সেবা কী হবে তা নির্ধারণ করতে হবে।
৫। পণ্য বা সেবার উৎস নির্ধারণ করতে হবে।
৬। পণ্য বা সেবার বাজার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে।
৭। সম্ভাব্য পণ্য বা সেবার দাম ও চাহিদা সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।
৮। সম্ভাব্য পণ্যের দাম নির্ধারণ করতে হবে।
৯। ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে পণ্য বা সেবার দাম নির্ধারণের জন্য বাজারমূল্যের চেয়ে কিছুটা কম দামে দিতে হবে।
১০. উপরিউক্ত কাজগুলো সম্পন্ন সম্পন্ন হলে পণ্য বা সেবার ছবি তোলার জন্য একজন দক্ষ আলোকচিত্রী রাখতে হবে যিনি পণ্যের ছবি তুলতে সক্ষম এবং ছবি সম্পাদনায় দক্ষ
১১. প্রাতিষ্ঠানিক একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে যেখানে উচ্চ স্তর থেকে নিন্ম স্তর পর্যন্ত সমন্বয় থাকবে।
এফ-কমার্স বাবসা করতে চাইলে করণীয়
অল্প পুঁজিতে এফ-কমার্স বাবসায় শুরু করতে হলে প্রথমেই তাকে ফেসবুকভিত্তিক বাবসা সংক্রান্ত বিষয়ে যথাযথ ধারণা রাখতে হবে। যেমন-
১. ফেসবুকে ব্যক্তিগত আইডি ও সেই আইডির অধীনে একটি ব্যবসায়িক বা প্রাতিষ্ঠানিক পেজ থাকতে হবে।
২. সম্ভাব্য পণ্য বা সেবার বিষয়ে ধারণা থাকতে হবে।
৩. একটি ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটার, ল্যাপটপ অথবা স্মার্টফোন থাকতে হবে।
৪. বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকতে হবে; বিশেষ করে নির্ভুল ইংরেজিকে গ্রাহকদের জিজ্ঞাসার প্রতিউত্তর দেয়ার জন্য দক্ষ হতে হবে।
৫. ছবি তোলা ও সম্পাদনার জ্ঞান থাকতে হবে।
৬. স্বল্প সংখ্যক পণ্য সংগ্রহ করে সেগুলো বিক্রির জন্য মজুদ রাখতে হবে।
৭. ফেসবুজ পেজ প্রমোট ও পোস্ট বুস্ট করার জন্য পেমেন্ট গেটওয়ে থাকতে হবে। যেমন- পেপ্যাল, ভিসা কার্ড অথবা মাস্টার কার্ড (পেওনিয়ার, পেইজা) থাকতে হবে যেগুলো বিদেশ থেকে গ্রাহক নিবন্ধনের মাধ্যমে বিনা খরচে বাংলাদেশে আনতে পারেন।
৮. যদি পুঁজির স্বল্পতা থাকে সে ক্ষেত্রে পাইকারি বাবসায়ীদের সঙ্গে পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে কিছু পণ্যের ছবি তুলে সেই ছবিগুলো ফেসবুক পেজে আপলোড করে সেগুলো প্রমোট করা যেতে পারে। পরে সে অর্ডার এলে পাইকারি ব্যবসায়ীর থেকে পণ্যগুলো সংগ্রহ করে ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করতে পারে।
লেখক : স্বত্বাধিকারী, কিয়স্ক অনলাইন শপ